রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: যৌতুকের মামলা করার অপরাধে প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে আদালতের সামনে থেকে অপহরণের পর গণধর্ষণের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।
বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) দায়িত্বে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) এইচএম শাহীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।আসামিরা হলেন গৃহবধূর স্বামী প্রবীর মিত্র, ননদজামাই মানব চন্দ্র, গৌরাঙ্গ নাথ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২ জন।
মামলার প্রধান আসামি প্রবীর মিত্র গৃহবধূর দায়েরকৃত অপর একটি অপহরণ মামলার আসামি হিসেবে জেলহাজতে রয়েছে। তবে বাকি আসামিরা পালাতক।এইচএম শাহীন জানান, ‘ভিকটিমের অসুস্থতার কারণে মামলা করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তাছাড়া ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষা এবং তার রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বুধবার রাতে এজাহার তৈরি করে তা কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঠানো হয়েছে। থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার মামলাটি রুজু করেছেন।
মামলার বরাত দিয়ে তিনি জানান, ‘পারিবাকি প্রস্তাবের মাধ্যমে ২০১৩ সালে স্বরূপকাঠীর নেছারাবাদ উপজেলার কুড়িয়ানা আদাবাড়ি গ্রামের বিনেন্দ্র মিত্রর ছেলে প্রবীর মিত্রর সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বরপক্ষের দাবি অনুযায়ী নগদ দুই লাখ টাকা, তিনভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ বিভিন্ন মূল্যবাহন মালামাল যৌতুক হিসেবে দেয়া হয়।
বিয়ের এক বছর না যেতেই স্বামী প্রবীর মিত্র ও তার পরিবারের লোকেরা গৃহবধূকে বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা এনে দিতে বলে। এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন ওই গৃহবধূ। সেই থেকে তার ওপর নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন। এমনকি এক সময় ঘর থেকেও বের করে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় গৃহবধূ বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলায় গৃহবধূর শাশুড়ি আরতি মিত্র ও দেবর পার্থ মিত্রকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। এতে স্বামীসহ অন্যান্য আসামি আরো ক্ষেপে যায়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘গত ১৬ এপ্রিল মামলার ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হন গৃহবধূ। দুপুরে তিনি বাড়ি ফেরার পথে নগরীর পোর্ট রোডস্থ আবাসিক হোটেল চিল এর সামনে অপরিচিত এক ব্যক্তি তার পথরোধ করে। ওই ব্যক্তি কৌশলে মুখে রুমাল ধরে গৃহবধূকে অচেতন করে অপহরণ করে। পরে একটি পরিত্যক্ত নির্জন অন্ধকার ঘরের মধ্যে গৃহবধূর জ্ঞান ফেরে। দেখতে পান তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে স্বামী প্রবীর মিত্র, ননদজামাই মানব চন্দ্র, গৌরাঙ্গ নাথসহ আরো কয়েকজন।
এসআই এইচএম শাহীন বলেন, আসামিরা মামলার কথা বলে গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। দ্বিতীয়বার নগরীর একটি রাস্তায় গৃহবধূর জ্ঞান ফেরে। সেখান থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে।তবে ওই ব্যক্তির নাম পরিচয়, গৃহবধূকে কোথা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বা কোথায় নিয়ে রাখা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন এসআই শাহীন।
তিনি বলেন, ভিকটিম ঘটনার সময় যেভাবে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে তাকে নগরীর বাইরে কোথাও নেয়া হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে পলাশপুর এলাকার কোনো একটি অন্ধকার ঘরে তাকে আটকে রাখা হয়। বিষয়টি থানা পুলিশ তদন্ত করে বের করবে।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত হাসান রহমান বলেন, ‘ঘটনার একদিন পরে গৃহবধূর স্বামী একটি যৌতুক মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে। এসময় বিচারক তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে এজাহারে নামধারী অপর দুই আসামি এখনো পালাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply